মহিমান্বিত লাইলাতুল মেরাজ একটি পবিত্র রজনী। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াত লাভের একাদশ বর্ষের রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান হিসেবে আরশে আজিমে আরোহণ করেন।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় শনিবার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ পালন করবেন মুসুল্লিরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, রোজা রাখা, নফল নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শবে মেরাজ পালন করেন।

লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত তথা ঊর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণ। তখন তিনি আল্লাহর দিদার লাভ করেন। অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের সবকিছুর অপার রহস্য। উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে আসেন। এই নামাজ মুমিনের মেরাজস্বরূপ।

৬২০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহ তায়ালার খাস রহমতে প্রথমে মক্কা মুকাররমার কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দিস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা বণী ইসরাইলের শুরুতেই বলা হয়েছে, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করালেন, যার চতুর্দিকে আমার রহমত ঘিরে রেখেছেন-যেন আমি কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই।

মেরাজের ঘটনায় বলা হয়েছে, মসজিদুল আকসায় রাসুল (সা.) জামাতে ইমামতি করে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। বো জামাতে নবী-রাসুলরা অংশ নেন। এজন্য তাকে ইমামুল মুরসালিন বলা হয়। প্রতিটি আসমানে হযরত আদম (আ.) ও বিশিষ্ট নবীদের সঙ্গে বিশ্ব নবীর (সা.) সালাম ও কুশলাদি বিনিময় হয়। তারপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হন। এ পর্যন্ত হযরত জিবরাইল (আ.) তার সফর সঙ্গী ছিলেন।

পবিত্র ধর্ম ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে। কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়টি বা নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক বা ফরজ হয়।

ইসলামী চিন্তাবিদরা লাইলাতুল মেরাজকে এভাবে পালনের অনুমতি দেন না, গ্রহণও করেন না। কেননা ঠিক কত তারিখে মেরাজ ঘটেছিল তার কোনো নির্ধারিত বিবরণ পাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধু এতটুকু সঠিক করে বলা যায়, নবুয়তের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা সত্য।

মেরাজ শেষে ফিরে রাসূল (সা.) যখন এ সম্পর্কে বলেন তখন সবার আগে তা আমি বিশ্বাস করি বলে হজরত আবু বকর (সা.) সত্যায়ন করেন। এ কারণে তিনি সেদিন সিদ্দিক উপাধি লাভ করেন।

মেরাজের এ ঘটনা তখন অবশ্য কাফিররা বিশ্বাস করেনি। তবে আধুনিক যুগে চাঁদে গমন থেকে নানাভাবে এর বৈজ্ঞানিকভিত্তি মিলছে বলে আলেম সমাজ মনে করেন।